‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২০১৬ সালে মোট বিও এ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২টিতে। এর ফলে, ৮ বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার বিনিয়োগকারী হারিয়েছে পুঁজিবাজার। ২০২৩ সালে বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ৯০ হাজারের বেশি’
বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অবস্থা ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে। একারনে বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে বলে, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান।
গত পৌনে এক দশকে প্রায় ১২ লাখ বিনিয়োগকারী, পুঁজিবাজার থেকে ফিরে গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী।
আস্থার অভাবে নতুন কোনো বিনিয়োগকারীও আসছেন না এ বাজারে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২০১৬ সালে মোট বিও এ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২টিতে। এর ফলে, ৮ বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার বিনিয়োগকারী হারিয়েছে পুঁজিবাজার।
২০২৩ সালে বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ৯০ হাজারের বেশি। ভুক্তভোগীদের মতে, পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীল এবং আস্থার সংকট থাকায় তারা ছেড়েছেন পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের এ ব্যবসায় আসেন মূলত আর্থিক লাভের জন্য। যে কারণে এমনকি ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। কিন্তু লাগাতার লোকসানের কারণে তারা আর ভরসা পাচ্ছেন না পুঁজিবাজারে। উপরন্তু ঋণগ্রস্ত হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন তারা। প্রায় সবাই চাচ্ছেন বিনিয়োগ তুলে নিতে।
শীঘ্রই বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে পুরো পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু বিও অ্যাকাউন্ট না থাকায় গত ১ বছরে প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি। ডিএসই মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪ সাল ছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সর্বনিম্ন দরপতনের বছর। প্রায় বিধ্বস্ত পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ক্যাপিটেল ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে তারা রাস্তায় নেমে ক্ষোভ-বিক্ষোভও করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের নানাবিধ অপকর্মের মারাত্বক প্রভাব পড়েছিল দেশের দুর্বল ও ভঙ্গুর পুঁজিবাজারেও। এছাড়াও অর্থপাচার, বৈদেশিক রিজার্ভ সংকট, বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব, সর্বোপরি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধাক্কা প্রায় খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল দেশের পুঁজিবাজারকে।
সে অবস্থায় গত বছরের ১৯ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো তার প্রথম কাজ। তিনি স্বীকার করেছেন, গত এক দশকে পুঁজিবাজারে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণও শুরু করেছেন ইতোমধ্যে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সেসব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তারা।