নিজস্ব প্রতিবেদক :
বছরের প্রথম দিনে সারাদেশে একযোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ৬ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪৪টি বই বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে।
চলতি বছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪১৫টি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৭টি। মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ৪ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৫৮৪টি। মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকের হার ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ। পিডিআই করা পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ৪ কোটি ২৪ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯টি। পিডিআই করা পাঠ্যপুস্তকের হার ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মোট ২২৩ টি লটে সরবরাহ করা পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৭ টি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বাসসকে জানান, বছরের শুরু ১ জানুয়ারি থেকে ৪১ কোটি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে মাধ্যমিকে মোট ৬ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪৪ টি বই বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪ কোটি ৪২ লাখ ২৯ হাজার ৫৩০টি বই সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে। মোট ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৪টি বই পিডিআই করা হয়েছে। অবশিষ্ট বই শিগগিরই দেওয়া হবে।
এনসিটিবি’র ওয়েবসাইটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪৪১ পরিমার্জন করা বই অনলাইনে পাওয়া যাবে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক স্তরের অবশিষ্ট পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছে যাবে। অন্যদিকে, ১০ জানুয়াইরর মধ্যে দশম শ্রেণির বই সহ ২০ জানুয়ারির মধ্যে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌছে যাবে।
এদিকে আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমু।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মাধ্যমে বই ছাপাতে গিয়ে এবছর শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ,পূর্বে বিদেশে বই ছাপানো হতো, যা এবছর বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এবার উন্নতমানের বই, ও মলাট এবং উন্নত ছাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে একটি বই পেয়ে বাচ্চারা পড়ায় মনোযোগী হতে পারে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অল্পসময়ের মধ্যে বই ছাপানোর অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধান কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বই ছাপানোর কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। বই ছাপানোর বাণিজ্যকে কিভাবে সুশৃঙ্খল করা যায় এবং একচেটিয়া ব্যবসাকে কিভাবে উন্মুক্ত করা যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে। এনসিটিবি অধিদপ্তরে আগে যারা কাজ করেছে অনিবার্য কারণে তাদের প্রায় সকলকেই বাদ দেয়া হয়েছে। যাদের কাজে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু মুদ্রণশিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে তাদের বোঝাপড়ার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এর মধ্যে কাজ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কারিগরি বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে; যেসময় থেকে বই ছাপানো শুরু হয়েছে তখন সময় খুব কম ছিল। তার মধ্যে অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। অংক, বিজ্ঞান বইয়েও কিছু ভুল সংশোধন করা হয়েছে। শিক্ষাক্রম অনিবার্য কারণে পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে বইয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকে,সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, কাগজের মান ঠিক রাখা এবং আমাদের বই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে যাতে নোইবইয়ের ছাপার কাজ না হয়, সে বিষয় তদারকির জন্য ঢাকার শিক্ষকদের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার টিমের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের টিমকে আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা জানাবো, যারা আমার জন্য নিবেদিত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে রাতদিন কাজ করেছে। ঢাকার বাইরে কোথায় কোথায় আর্ট পেপার মজুত আছে সেটা তারা গোয়েন্দা লাগিয়ে খুঁজে খুঁজে বের করেছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে আইনানুগভাবে প্রেস মালিকদেরকে ন্যায্যদামে দিয়েছে। মলাটের কাগজ মজুত না থাকায় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এগুলো আমদানি করতে সহযেগিতা করেছে।
উপদেষ্টা বলেন, বই ছাপানোর কাজে পদে পদে ষড়যন্ত্র ছিল, যা অতিক্রম করা হয়েছে। আজও ( ১ লা জানুয়ারি) কোনো কোনো জেলায় ষড়যন্ত্র করে বই আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। বই ছাপানোর কাজে অনেক প্রেসের মালিক, কাগজ উৎপাদনকারী সংস্থা বর্তমানের কম মূল্যে কাগজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে।