প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা না হলে যাদের অর্থ আছে তারা আলাদা স্কুল করে নিচ্ছে। তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়বে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সন্তানরা। এভাবে শিক্ষা সামাজিক বৈষম্যটা বাড়াচ্ছে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের মূল কথাই ছিল বৈষম্যহীনতা। আমরা যদি সামাজিক বৈষম্য কমাতে চাই তাহলে প্রাথমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়’ সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বড় বড় ডিগ্রি আছে কিন্তু ডিগ্রি অনুযায়ী কি ওই শিক্ষার্থীর সেই যোগ্যতা আছে? অনেক ক্ষেত্রেই নেই। অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্তভাবে তারা কাজ করতে পারছে না। এতে আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সেক্টরে বাইরের দেশের লোক এনে কাজ করাতে হয়। দেশে উপযুক্ত লোক পাচ্ছেনা বলেই বাইরে থেকে জনবল আনতে হচ্ছে। আমরা যোগ্য লোক তৈরি করতে পারছি না।
উপদেষ্টা বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্য শুধু পড়ার পেছনে দৌড়ালেই চলবে না। শিক্ষার্থীর জন্য কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিজও প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে।
সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান খারাপের কারণেই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বই ছাপা হয়েছে। কিন্তু বই পড়ানোর জন্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগে কিছু সমস্যা আছে। কারণ এ শিক্ষক নিয়োগে আমাদের যে কাঠামো আছে এ কাঠামোর বাইরে যেতে হয়। যে নিয়োগ প্রক্রিয়া আছে সেটাতে দেখা যায় নির্ধারিত এক ভাষার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আটকে গেছে। পাশাপাশি আরও সমস্যা হলো নির্ধারিত ভাষার শিক্ষক খুঁজে পাওয়াও কঠিন। আর এ জন্য আমরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের নিজেদের ভাষায় পাঠগ্রহণের জন্য ডিজিটাল ক্লাসের ব্যবস্থা করছি। আমরা লেকচার তৈরি করছি যেগুলো দেখে দেখে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে। লেকচারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যে সাধারণ শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারবে। এটা হয়ে গেলে আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলীসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা।
একদিনের সরকারি সফরে রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসেন উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। মতবিনিময় সভা ছাড়াও তিনি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।