১৪ মার্চ,২০২৫:
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দাবি করে বলেছেন, বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাকের মূল মদদদাতা ছিল ভারত।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
এদিন বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতির ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীযৌথ সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
গত ১১ মার্চ দুপুর ১টার দিকে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরিত হয়। এরপর ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে ওই ট্রেনে হামলা চালায়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ জানান, সন্ত্রাসীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছিল। একদল নারী ও শিশুদের ট্রেনের ভেতর আটকে রেখে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, অন্যদল যাত্রীদের বাইরে টেনে নিয়ে যায় এবং জিম্মি করে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর প্রধান বলেন,
হামলাকারীরা আফগানিস্তানে অবস্থিত হ্যান্ডলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল এবং তারা বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করছিল। তিনি বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি বৃহত্তর সীমান্ত সন্ত্রাসী পরিকল্পনার অংশ।
আহমেদ শরীফ জোর দিয়ে বলেন, এ ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও তৈরি করেছে, যা পরে ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলোতেও প্রচারিত হয়।
এদিকে বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারা বেলুচ জাতীয়তাবাদের নামে সন্ত্রাস চালায়, তাদের বেলুচ জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি এ সময় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষ প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী পাকিস্তানের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার কঠোর বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
তিনি জানান, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ১১,৬৫৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১৮০টি গোয়েন্দা ভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হয়।
আইএসপিআর প্রধান দাবি করেন, আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম পাকিস্তানে হামলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার মতে,
আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, মার্কিন বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে এবং আফগানিস্তান প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রু শক্তির প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে।
তিনি জানান, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অর্থায়নে চোরাচালানের ভূমিকা রয়েছে, যা পাকিস্তান সরকার কঠোরভাবে দমন করছে।
পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান এ সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারতকে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।
তার ভাষায়, ‘এটিই প্রথমবার নয় যে, পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিশ্বকে এ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে হবে’।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় কোয়েটা থেকে ৪৪০ জন যাত্রী নিয়ে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি রওনা দেয়। গুদালার ও পেরু কানরি অঞ্চলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা এতে হামলা চালায়। তারা প্রথমে গুলি চালায় এবং পরে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ২১ জন যাত্রী ও সেনাসদস্য শহিদ হন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের পর্বতমালার দিকে ধাওয়া করে এবং জিম্মিদের নিরাপদে উদ্ধার করে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক রয়েছে। পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় যারা লিপ্ত, তারা ব্যর্থ হবে। আর আমাদের জাতীয় ঐক্য বিজয়ী হবে’।