ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.

সাবেক এসএসএফ প্রধানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক


গণযোগ | গণযোগ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম সাবেক এসএসএফ  প্রধানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক প্রধান মো. মজিবুর রহমান । ছবি: সংগৃহীত

 

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক প্রধান মো. মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের শত কোটি টাকার ব্যাংক স্থিতি এবং অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার পর ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরুর আগে মাত্র চারদিনের তদন্তে শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পান। দুদক সূত্র জানায়, মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিব এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এসব সম্পদ যেন হস্তান্তর কিংবা অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নিতে না পারে সেজন্য  ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেনের আদালতে এসব সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশ প্রার্থনা করলে গতকাল রোববার আদালত তা মঞ্জুর করেন।

 

মজিবুর রহমান গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত এসএসএফ প্রধান ছিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী এখন পলাতক রয়েছেন।
মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ রাখার আর্জিতে দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকা আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন পূর্বক ভোগ দখলে রাখার অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তিনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাধু উপায়ে নিজ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এসব অর্থসম্পদ দখলে রাখা এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা ও উত্তোলনের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করে মানি লন্ডারিং এর সাথে সম্পৃক্ত অপরাধ 'দুর্নীতি ও ঘুস' সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ ও সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দ্যেশে তিনি স্থানান্তর বা হস্তান্তর করার অভিযোগ রয়েছে। 

 

আবেদনে বলা হয়, অবৈধ পন্থায় অর্জিত এসব সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করা না গেলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবেনা। ফলে এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তর  করতে যেন না পারে সেজন্য  মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিব এর ব্যাংক হিসাবসহ স্থাবর- অস্থাবর সব সম্পদ অবরুদ্ধের আবেদন জানালে আদালত অবরুদ্ধের আদেশ দেন। 

 

প্রাথমিক অনুসন্ধানে মজিবুর রহমানের সম্পদের মধ্যে রয়েছে মিরপুরের মাটিকাটা এলাকায় ৪০৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট। যার রেজিস্ট্রি মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সাভারে ৫ শতাংশ জমিসহ টিনশেড ঘরের মূল্য দেখিয়েছেন ৯ লাখ টাকা, মিরপুরের মাটিকাটা এলাকায় এক কাঠা জমি, জোয়ারা- সাহারা মৌজায় ০১৬৫ অযুতাংশ জমি, ঢাকার খিলক্ষেতে  দক্ষিণখান এলাকার বরুইয়া মৌজায় ৭.৫০ কাঠা জমির মূল্য দেখিয়েছেন ৬৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে (সেক্টর-১৬, রোড নম্বর- ৫০৪-এ, প্লট নম্বর-৯) প্লটসহ আবাসিক ভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাড়িসহ এই প্লটের আনুমানিক বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা।

 

এছাড়াও মজিবুর রহমানের নামে ট্রাস্ট ব্যাংক  ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট প্রিন্সিপাল শাখায় ১৬ টি এবং সোনালী ব্যাংক, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কর্পোরেট শাখা আলাদা ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৬ কোটি টাকা স্থিতি রয়েছে। ব্যাংকগুলোতে এ পর্যন্ত লেনদেনের পরিমাণ প্রায় শতাধিক কোটি টাকা বলে দুদক সূত্র জানায়।

এছাড়াও মজিবুর রহমানের নামে ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্যুকৃত জাতীয় সঞ্চয় পত্র (রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ২০২০-০৫২২৬১১) ২০ লাখ টাকা এবং ২০২১ সালের ৩০শে জুন ইস্যুকৃত জাতীয় সঞ্চয় পত্র (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২০২১-০৬৭০৭৬০) ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র পাওয়া গেছে। এছাড়াও তাছিয়া সিকিউরিটিসজ লিমিটেড ও শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডে দুটি বিও আ্যাকাউন্ট এবং ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডে দুটি আলাদা বিও আ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে তদন্ত টিম। মজিবুর রহমানের নামে টয়োটা হ্যারিয়ার ২০১৫ মডেলের একটি গাড়ি রয়েছে  (রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ঢাকা মেট্রো ১৮-৫৭৫৭)। গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা।

 

প্রাথমিক তদন্তে মজিবুর রহমানের স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে পাওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে জোয়ারা সাহারা এলাকায় চৌধুরী কুঞ্জ-২ ভবনে ৩৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট। ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর  রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নম্বর ৯৮৮২। জমির দলিল মূল্য ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাউনিয়া এলাকায় সাড়ে ৭ কাঠার একটি প্লট রয়েছে, যার দলিল নাম্বার ৯৬৬১, রেজিস্ট্রি তারিখ ৭ নভেম্বর ২০২২। এটির ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর বাউনিয়া এলাকায় ৪ কাঠার আরো একটি জমি ক্রয় করা হয়,  দলিল নম্বর ৯৩৭৪। যার দলিল মূল্য ৫২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। 

 

দুদক জানায়,বাউনিয়া এলাকায় ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ১০০৫৮ নম্বর দলিলমূলে ২ কাঠা জমি ক্রয় করা হয় ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এর মাত্র ১৪ দিন আগে একই এলাকায় ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর ২.৫০ কাঠা জমি ক্রয় করা হয় তাসরিন মুজিবের নামে। যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এর তিন মাস পর ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাউনিয়া এলাকায় ২.২৭ কাঠা জমি ক্রয় করা হয় (দলিল নাম্বার ১১১০)  ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকায়। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর ৭৮৯৩ নম্বর দলিল মুলে বাউনিয়া এলাকায় ৯ কাঠা জমি ক্রয় করা ৮০ লাখ ৮৯ হাজার টাকায়। একই এলাকায় (বাউনিয়া) ২০২৩ সালের ১৩ জুন ৫০ কাঠা জমি ক্রয় করা হয় (দলিল নম্বর ৫৪১৮) ২৭ লাখ ৮ হাজার টাকা মূল্যে। 

 

দুদক সূত্র জানান মজিবুর রহমানের স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ জুন পর্যন্ত মাত্র ৮ মাসে ৭টি প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ মৌজা মূল্যে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। যার প্রকৃত মূল্য আরো অনেক বেশি। তাসরিন মুজিবের নামে ট্রাস্ট ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কর্পোরেট শাখায় লেনদেন ছাড়াও ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ পেয়েছে। এ ছাড়াও তাছিয়া সিকিউরিটিজ, এসবিএল ক্যাপিটেল ম্যানেজমেন্ট, শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডে ৪টি বিও আ্যাকাউন্টে লেনদেন তদন্ত করে দেখছে দুদক অনুসন্ধান টিম।  

সূত্র: বাসস

গণযোগ/এমএইচ

Side banner

আইন ও আদালত বিভাগের আরো খবর

Side banner
Link copied!