নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে ইনসাফ ভিত্তিক উন্নয়ন হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, জনগনের খেদমতের দায়িত্ব পেলে ন্যায্য দাবিগুলো চাওয়া ছাড়াই বাস্তবায়ন করা হবে। কথা দিচ্ছি রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশে চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। জুলুমবাজি থাকবে না। দখলবাজিও থাকবে না।
“আমাদের সন্তানদের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’।”
১৭ জানুয়ারি শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা জেলার টাউন হল ফুটবল মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চুয়াডাঙ্গায় আগমন নিয়ে জামায়াত আমীর বলেন, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৫ বছর আমরা কথা বলতে পারিনি। চুয়াডাঙ্গাতে এসেছি দফায় দফায়। কাজ করেছি চুপি চুপি। চলে যেতে হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কারণ হচ্ছে ফ্যাসিবাদ এই জাতিকে আঁকড়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে কোথাও শান্তিতে দাঁড়াতে দেয়নি।
তিনি আওয়ামীলীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বলেন,
নেত্রকোনায় একটি বাড়িতে, বাপবেটা দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। বাবা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আর ছেলে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী। দুইজনকে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীর মামলা দেয়। আমাদের ভাত খাওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
এরা সাড়ে ১৫ বছর দেশকে ইচ্ছে মত চালিয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষের কথা বলে দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করেছে। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিভক্তি টেনেছে। এক এক করে আমাদের ১১ জন নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।
সাড়ে ১৫ বছর আমাদের অফিস খুলতে দেওয়া হয়নি, বসতে দেওয়া হয়নি। দলীয় কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতৃবৃন্দের বাড়ি ঘরকে বুলডোজার চালিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আর কোন দলের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি।
আমাদের দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর কোন দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয় নাই। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বিপ্লবের মুখে সরকার দিশেহারা হয়ে ১ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি জনতার মাঝে প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশে সবচেয়ে মজলুম দল কোনটা? সমস্বরে আওয়াজ ‘জামায়াতে ইসলামী’।
আমাদের অসংখ্য কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ধরে নিয়ে খুন করা হয়েছে। আমাদের ঘরবাড়ি লুন্ঠন করা হয়েছে। চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, তারা এদেশের বিরোধীদলের দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী, নিরীহ মানুষ আলেম ওলামাদের ধরে নিয়ে গুম করেছে। বিচারের নামে প্রহসন করে তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে।
এরা আমাদের স্কুল কলেজ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দুর্নীতি আর দু:শাসন একটা আরেকটার পরিপূরক। যেখান দু:শাসন আছে সেখানে দুর্নীতি থাকবেই। এজন্য কি আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে? তাদের রক্তের উপর দিয়ে দখলবাজি চলবে? নিরীহ মানুষকে আসামি বানিয়ে বাণিজ্য চলবে? তাদের একটাই চাওয়া ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা ন্যায় বিচার চাই। বৈষম্য চাই না।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা রক্ত দিয়ে যেহেতু তৃতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে ইনশা আল্লাহ আমরা রক্ত দিয়ে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করবো। সন্তানদের স্লোগান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবন যায় যাবে; আমাদের আন্দোলন ছাড়বো না।
এর আগে তিনি সমাবেশ স্থলে জুমআর নামাজের আলোচনা রাখেন এবং তার ইমামতিত্বে লাখো নেতাকর্মী জুমাআর নামাজ আদায় করেন। এর আগে সকালে মহিলা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
শহীদ শুভর গর্বিত পিতা মো. আবু সঈদ মন্ডল বলেন, আমার সন্তান অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ স্বাধীনতার অপব্যবহার করছে। একটা কথা বলতে চাই, আমার সন্তানদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করবেন না।
কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় পুরো চুয়াডাঙ্গা শহর। কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে পুরো চুয়াডাঙ্গাকে বিলবোর্ড, তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ব্যানার দিয়ে পুরো বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। ফলে চুয়াডাঙ্গাজুড়ে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। কিছুক্ষণ পর পর নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো চুয়াডাঙ্গা শহর।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা এই সম্মেলনের আয়োজন করে। জেলা আমীর মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর আনোয়ারুল হক মালিক, নায়েবে আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, মো আব্দুল কাদের, জেলার দলিত পরিষদ নেতা শোভন দাস, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, ছাত্র শিবিরের জেলা সভাপতি সাগর আহমেদ, শহীদ শুভর পিতা মো. আবু সঈদ মন্ডল। এর আগে মাওলানা মহি উদ্দীনের অর্খসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়।