ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
gonojog24
Bongosoft Ltd.

জীবনকে আমূল বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি


গণযোগ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ০১:২৮ পিএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম জীবনকে আমূল বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি

 

সারা বিশ্বে অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিস্তারে খুচরা শপগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে

স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক; সবার জীবন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়

চলমান সময়ের  প্রযুক্তির উৎকর্ষ মানুষের কল্পনাকেও ছাপিয়ে গেছে। প্রতি দশকেই মানুষের প্রাযুক্তিক উন্নয়ন বিস্ময় সৃষ্টি করছে। ডিজিটাল হয়ে উঠছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহাবিশ্বের প্রায় সবকিছু। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ইতিহাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। এখন বিশ্বের উন্নয়নের ধারনা বদলে গেছে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যে দেশে যত বেশি সেই দেশ তত বেশি উন্নত। মহাকাশজুড়ে হাজার হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর দৃশ্যপট বদলে দেওয়ার মহানায়ক। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপড, ট্যাব, অ্যাপল, অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মোবাইল অ্যাপ, রোবট, ড্রোন, মোবাইল ব্যাংকিং,অনলাইনে কেনাকাটা, রাইড, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, ফিসিং প্রযুক্তিসহ বহু অভিনব প্রযুক্তি বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জয়জয়কার চলছে। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত পত্র-পত্রিকা প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে অনলাইনে প্রবেশ করেছে। আইফোন হ্যান্ডসেট হাতের মুঠোয় পুরে দিয়েছে আস্ত একটি কম্পিউটারকে।

 প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে আজকের গোটা প্রজন্ম। হাতে হাতে অপার প্রযুক্তির সৃষ্টির সম্ভার। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী শহর চলছে প্রযুক্তির হাত ধরে। অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সমপ্রসারণ হচ্ছে ব্যাপক হারে। স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত সবার জীবন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। আগে অজপাড়া গাঁ বলতে যা বুঝানো হতো তা এখন আর দেখা যায় না গ্রামাঞ্চলে। ঘরে ঘরে আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া। আগামী বছরগুলোতে এই গতি আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে।

মোবাইল ফোন ইতি ঘটিয়েছে চিঠি-ঘড়ি-টর্চলাইট যুগের। টেরিস্টরিয়াল বা ডিস লাইনে টিভির পতন ঘটাচ্ছে তারহীন ডিটিএইচ। অললাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিংয়ের দ্রুত প্রসার প্রতিটি বাড়িতে জীবন ধারা বদলে দিয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব বিনোদনের দুনিয়া বদলে দিয়েছে। সময়ের পরিবর্তন ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে মানুষের পছন্দ এবং খাদ্যাভ্যাস। যেমন বদলে গেছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন ব্যবস্থা। অনেকের ঘরের খাবারের চেয়ে বেশি পছন্দ হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার আর ফাস্টফুড। তাদের জন্য ফুডপান্ডা জাতীয় সরবরাহ প্রতিষ্ঠান অনিবার্য হয়ে উঠেছে। অ্যামাজান ও গুগলের পর ভার্চুয়াল সহকারীকে ডিভাইসের মাধ্যমে এনেছে আলিবাবা। আছে দারাজের মত বহু অনলাইন শপিং অ্যাপস। কোন কিছু চাহিবা মাত্র পাওয়া যাবে। আর এই অনলাইন মার্কেটিংয়ের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় খুচরা শপগুলোর শাটার টানতে হচ্ছে।

 

মোবাইল অ্যাপ বিশ্লেষণী সংস্থা ‘অ্যাপ অ্যানি’র তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছেন। স্মার্টফোনে কথা বলার চেয়ে জিফ, ইমোজি, ভিডিও কলকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন মানুষ। মানি ব্যাগে এখন মানি রাখার বদলে থাকে ক্রেডিট কাডর্, ট্রাভেল কার্ড।

আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে কৃষিকে। জমি কর্ষণ থেকে ফসল লাগানো, ফলানো, কাটা, বাজারে আনা পর্যন্ত সব কিছু করছে যন্ত্র। ড্রোন এনেছে বিপ্লব। দুর্গম এলাকায় চিকিত্স সেবা দিচ্ছে। জেলেরা সাগরে মাছ ধরছে আধুনিক প্রযুক্তিতে। অনলাইনেই আছে গোটা পৃথিবীর আদ্যপান্ত। ইন্টারনেটে গুগলে সন্ধান করলেই চাহিবা মাত্র সব পাওয়া যায়। কাগজের বইয়ের জায়গা নিচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বুক (ই-বুক)। কোন কিছু সন্ধানের পরিবর্তে এখন হাতের মুঠোয় গুগল, মজিলার মত অসংখ্য সার্চিং সাইট। যেখানে একটি শব্দ লিখে সার্চ করলে মিনিটে উদ্ভাসিত হয় তথ্যভান্ডার। পাঠ্যপুস্তক, লাইব্রেরি স্টকে থাকা বস্তা বস্তা বই পড়তে অতটা ধৈর্য্য নেই এই প্রজন্মের অনেকের। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম এখন অনলাইনে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকান্ড, নিবন্ধন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, নোটিশ, চাকরি নিবন্ধন থেকে শুরু করে যেকোন বার্তা অনলাইনের মাধ্যমে সেরে নেওয়া হচ্ছে।

মোবিক্যাশ, বিকাশ, রকেট, মাইক্যাশ, ইউক্যাশ এর মত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় আজকের মানুষদের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝুঁকিতে শংকিত থাকতে হয় না। সামান্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সিমের একটি নম্বরে আজকের প্রযুক্তি মানুষকে বহু টাকার রাখার গোপনীয় ব্যবস্থা দিয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইন মানি ট্রান্সফার এবং এক দেশ থেকে অন্যদেশের টাকা স্থানান্তরের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইন, ই-ব্যাংকিং (যেমন- ওয়েস্টার্ন মানি ট্রান্সফার, মানি একপ্রেস) এর মতো সুবিধা ভোগ করছে এখন মানুষ। রয়েছে নানা অ্যাপ। গাড়ি ডেকে পাঠাতে, খাবার অর্ডার করতে, গান শুনতে, কোনো কিছু কিনতে, এমনকি সঙ্গী খুঁজতেও এখন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন মানুষ। বিনামূল্যের অ্যাপ ব্যবহারের পাশাপাশি পয়সা খরচ করেও অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন অনেকে।

স্মার্টফোন আসার পর বদলে গেছে অনেক কিছুই। মানুষ এখন আগের উপায়ে অনেক কাজ না করে, নতুন বিকল্প উপায় খুঁজে নিতেই পছন্দ করেন বেশি। মানুষ এখন আর আগের মতো ফোনে কথা বলতে পছন্দ করেন না। গবেষণা সংস্থা ইমার্কিটারের তথ্য অনুযায়ী, মানুষ এখন সোফায় বসে সরাসরি সমপ্রচার দেখেন কম, স্মার্টফোন চালান বেশি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টিভি বিজ্ঞাপনের আয়কে ছাড়িয়ে গেছে মোবাইল বিজ্ঞাপনের আয়। ভিডিও কনফারেন্স ও নানা ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি কাজ দ্রুত ও সহজ হয়ে গেছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই মিলছে জরুরি সেবা। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ই-কমার্সের সেবা। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, টেলিভিশন ডিভাইসসহ বহু প্রযুক্তি জীবনকে অভাবনীয় করে তুলেছে। ১৬২৬৩ নম্বরে ডায়াল করে ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাচ্ছে চিকিত্সা পরামর্শ। এখন বিতর্ক চলে স্টিভ জবস, বিল গেটস নাকি এলন মাস্ত- প্রযুক্তি বিশ্বে কার প্রভাব বা অবদান বেশি।

ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগরী। প্রজন্মের চোখ এখন অনলাইনে।  ২০১০ সালে বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩০ কোটি। ২০১৯ সালে ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটিতে। ২০২৪ এই সংখ্যা আরো বেড়েছে।

সবমিলিয়ে  বিশ্বে বর্তমানে মোট মানুষের চেয়ে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা ও সেবা।

Side banner
Side banner
Link copied!