ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
gonojog24
Bongosoft Ltd.

জুলাই বিপ্লবে পায়ে গুলিবিদ্ধ ফয়সাল ; গ্রামে অসহায় পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন না রাজনীতিবিদরা


গণযোগ | বিশেষ প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ০২:৪৩ এএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম জুলাই বিপ্লবে পায়ে গুলিবিদ্ধ ফয়সাল ; গ্রামে অসহায় পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন না রাজনীতিবিদরা
১৮ জুলাই ২০২৪ , ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হোন ফয়সাল। ছবি: গণযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত বছরের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় একাই পড়ে আছেন স্নাতক প্রথমবর্ষে পড়ুয়া ফয়সাল। জাতীয় অর্থপেডিক ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) তৃতীয় তলার মডেল-বি ওয়ার্ডের ১১ নাম্বার বেড এখন তার ‘ঘরবাড়ী’। পরিবার পরিজন বা আপন কেউ পাশে নেই ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ এই তরুনের।

সেবিকা আর রুটিন চিকিৎসক ছাড়া পরিবারের থেকে খোঁজ নেয়ার কেউ পাশে নেই। নিঃস্বঙ্গে এই তরুন ফয়সাল মফস্বলের একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান।  নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় লেগুনা (হিউম্যান হলার) চালাতেন। ছোট তিন ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও পাঠাতেন নিজের সামান্য আয় থেকে। প্রতিদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে নিজের পায়ে দাড়িয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটাতে চেয়েছিলেন ফয়সাল। অথচ এখন সেই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকটা অচল হয়ে, শুয়ে-বসে সময় কাটে হাসপাতালের বিছানায়।

 

প্রথম দিকে কিছুদিন দরিদ্র ভ্যান চালক বাবা তার সাথে হাসপাতালে থাকতেন। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে টানা কিছদিন ঘুমিয়ে থাকার কারনে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। ঢাকাতে নিকট কোন আত্মীয়ের বাসা না থাকায় তিনি গ্রামে চলে যান। সম্প্রতি সেই বাবাও দূর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। সংসার চালানোর কেউ নেই। স্থানীয় মানুষের কাছে অনেকটা হাত পেতে চলছে ফয়সালদের পটুয়াখালী, দুমকি’র সংসার।  এই ক’মাসে গ্রামের একাধিক মুদি দোকানে বাকীর অংক ছাড়িয়েছে লাখ টাকা প্রায়।


পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার দরিদ্র ভ্যান চালক নিজাম হাওলাদার (খোকন) এর ছেলে ফয়সাল হাওলাদার। অভাবের তাড়নায় ১৫ বছর বয়সের আরেক ভাইকে পাঠিয়েছেন টেম্পু চালকের সহকারীর কাজ করতে। শারিরীক অসুস্থতা, অভাব আর ভবিষ্যত নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় ভারাক্রান্ত পঙ্গু এই তরুন। 

সরকারি কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফয়সাল জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করছে। আহতও নিহতদের জন্য গঠন করা জন্য ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ ইতোমধ্যে ১ লাখ টাকা দিয়েছে। অভাবের সংসারে তা শেষ হয়ে গেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি হেলথ কার্ড ইস্যু করার ঘোষনা দেয়া হয়েছে । হয়তো এখান থেকে কিছু সহযোগিতা আসবে। বললেন গুলিবিদ্ধ হওয়া এই তরুন।

 

তবে সংশ্লিষ্ট সবার কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে বলে অনেকটা অনুযোগের সুরে বললেন এই তরুন ‘গণঅভ্যুথ্থানে আহতদের সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। তানাহলে আহতরা নিজের এবং পরিবারের দায়িত্ব নিবে কিভাবে?’

স্থানীয় রাজনীতিবিদরা কেউ তার দরিদ্র পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন না, এই প্রতিবেদকের কাছে এমনটাই ক্ষোভ ঝাড়লেন ফয়সাল। ‘অথচ আমাদের এই আন্দোলনকে পুঁজি করে তারা রাজনীতি করছেন। আমরা এখন তাদের কেউ নই! ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা কি আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে দেখভাল করবে?’ গভীর অনিশ্চয়তার এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন ফয়সাল।

তবে গ্রামে তার দরিদ্র বাবার জন্য একটি অটোরিকশা জোগাড় হলে সংসারটা ‘টেনে নিতে’ সুবিধা হতো বলে প্রতিবেদক কে জানান গুলিবিদ্ধ ফয়সাল ।

 

পঙ্গু হাসপাতালের বিশেষায়িত এই ওয়ার্ডে শুয়ে আছেন বেশ কিছু কিশোর, তরুন, যুবক; জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে  যারা বিগত সরকারের পুলিশ বাহিনী দ্বারা আক্রমণের শিকার হোন, গুলিবিদ্ধ এবং নির্যাতনের শিকার হোন। প্রতিটি বিছানায় যন্ত্রনা নিয়ে শুয়ে আছেন একেকজন মানুষ যাদের প্রত্যেকের রয়েছে ভিন্ন রকম করুণ গল্প। পরিবার পরিজন ছেড়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে বসে বিষন্নতা ভর করছে প্রতিনিয়ত। কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তারা? আদৌ ফিরতে পারবেন তো?

Side banner

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর

Side banner
Link copied!