ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২
gonojog24
Bongosoft Ltd.
ডায়ানার উপর নজরদারির অভিযোগ স্বীকার

প্রিন্স হ্যারির কাছে ক্ষমা চাইলো ব্রিটিশ পত্রিকা


গণযোগ প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১২:২৩ এএম আপডেট: জুলাই ১, ২০১৯ ১১:৩৯ এএম প্রিন্স হ্যারির কাছে ক্ষমা চাইলো ব্রিটিশ পত্রিকা
প্রিন্সেস ডায়ানার কোলে প্রিন্স হ্যারি। ফাইল ফটোঃ ১১ জুন, ১৯৮৮

 

 

ব্রিটেনের রাজকুমার প্রিন্স হ্যারি বুধবার তাঁর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন সংক্রান্ত মামলায় যুক্তরাজ্যে রিউপার্ট মারডক-এর মালিকানাধীন ট্যাবলয়েড পত্রিকার বিরুদ্ধে বিশাল এক বিজয় ঘোষণা করেছেন।

 

মারডক-এর কোম্পানি বছরের পর বছর ধরে প্রিন্স হ্যারির ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানোর জন্য নজিরবিহীনভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকার সূত্রে জানা যায়,

নিউজ গ্রুপ নিউজপেপারস (এনজিএন) স্বীকার করেছে যে তাদের সাংবাদিক এবং ভাড়া করা প্রাইভেট গোয়েন্দারা হ্যারির ফোন হ্যাক করেছে, তাঁর উপর নজরদারি করেছে এবং তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার করেছে। মারডকের কোম্পানি তাদের দ্য সান এবং বর্তমানে-বিলুপ্ত নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড পত্রিকার অবৈধ নজরদারির জন্য হ্যারির কাছে “পূর্ণ এবং দ্ব্যর্থহীন ক্ষমা” প্রার্থনা করে।

 

হ্যারির আইনজীবী ডেভিড শেরবোর্ন লন্ডনের হাই কোর্টে এই বিবৃতি পড়ে শোনান। বিবৃতিতে এমনকি মামলার মূল বিষয়ের বাইরে গিয়ে হ্যারির মা প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার জীবনে নাক গলানো এবং তাঁর পরিবারের উপর এই নজরদারির প্রভাবের কথা স্বীকার করা হয়।

 

“আমরা ডিউককে (হ্যারি) যে বেদনা দিয়েছি এবং তাঁর পরিবার, আত্মীয়তা এবং বন্ধুত্বর জন্য যে ক্ষতি সাধন করেছি, তা স্বীকার করছি এবং তার জন্য ক্ষমা চাইছি। আমারা যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছি,” বিবৃতিতে বলা হয়।

 

নিউজ গ্রুপ অনেক দিন আগেই স্বীকার করে যে তাদের নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড পত্রিকার কর্মীরা অনেকের ফোন হ্যাক করেছিল। নজরদারির খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হবার পর মারডক ২০১১ সালে এই সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড পত্রিকা বন্ধ করে দেন। কিন্তু এই প্রথমবার তাদের দ্য সান দৈনিক পত্রিকায় বেআইনি কর্মকাণ্ডের কথা কোম্পানি স্বীকার করলো।

 

 

এক সময় দ্য সান খেলা-ধুলা, সেলেব্রিটি খবর এবং ৩ নম্বর পাতায় টপলেস মডেলের ছবি ছেপে লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি করতো।

 

রাজা তৃতীয় চার্লস-এর ৪০ বছর বয়সী ছেলে হ্যারি তাঁর মামলা বিচার পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে দ্য সান-এর বেআইনি কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে তুলে ধরে আদালতে তাঁর দাবীর পক্ষে রায় পাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

নিউজ গ্রুপ নিউজপেপারস এরই মধ্যে ১,৩০০ জনের দায়ের করা মামলা আদালতের বাইরে মিটমাট করেছে। শুধু হ্যারি এবং লেবার পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য টম ওয়াটসন বাকি ছিলেন।

হ্যারির দায়ের করা মামলা মঙ্গলবার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দরকষাকষির পর নাটকীয় নিষ্পত্তির ঘোষণা আসলে তা স্থগিত হয়ে যায়।

মামলা নিষ্পত্তির ফলে হ্যারি আদালতে তাঁর কথা তুলে ধরতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, তিনি নিজের এবং শত শত ভুক্তভোগীর পক্ষে যে জবাবদিহিতা চাইছিলেন, এই নিষ্পত্তির মাধ্যমে তা অর্জন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে, তাদের ভয়েস মেইল হ্যাক করা হয়েছে, তাদের গাড়িতে গোপনে মাইক্রোফোন লাগানো হয়েছে এবং তারা আরও নানা রকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

নিউজ গ্রুপ স্বীকার করে যে হ্যারিকে লক্ষ্য করে “সাংবাদিক এবং প্রাইভেট গোয়েন্দারা ফোন হ্যাকিং, নজরদারি এবং ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার করেছে।” মামলার আগে এনজিএন জোরালো ভাবে এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিল।

 

প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু

গণমাধ্যমের সাথে হ্যারির বিবাদ তাঁর কৈশোর থেকে শুরু, যখন ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো তাঁকে নিয়ে যেকোনো কিছু - তাঁর আহত হওয়ার খবর থেকে তাঁর গার্ল ফ্রেন্ড এবং মাদকের ব্যবহার নিয়ে খবর - উৎসাহের সাথে প্রকাশ করে।

কিন্তু ট্যাবলয়েডগুলোর বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ আরও গভীর।

তিনি তাঁর মা’র মৃত্যুর জন্য মিডিয়াকে দায়ী করেন। প্রিন্সেস ডায়ানা ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান, যখন পাপারাটসি নামে পরিচিত ফটোগ্রাফাররা তাঁর গাড়ি ধাওয়া করছিল।

তিনি তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কল-এর উপর অবিরাম আক্রমণের জন্য মিডিয়াকে দোষারোপ করেন, যে কারণে তারা রাজকীয় জীবন ত্যাগ করে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

হ্যারি ট্যাবলয়েড অন ট্রায়াল শিরনামের এক ডকুমেন্টারিতে বলেছেন, এই মামলা তাঁর পরিবারে সংঘাত সৃষ্টি করেছিল।

 

আদালতে দাখিল করা দলিলে তিনি প্রকাশ করেন যে তাঁর বাবা মামলার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন যে, তাঁর বড় ভাই এবং ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী উইলিয়াম, প্রিন্স অফ ওয়েলস নিউজ গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি প্রাইভেট অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছিলেন, যার মূল্য ১২ লক্ষ ডলারের বেশি ছিল বলে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছে।

 

ওয়াটসন এবং ‘শিকারি’ হ্যারি

প্রাক্তন সংসদ সদস্য ওয়াটসন যখন ট্যাবলয়েড পত্রিকার বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ তদন্তে যুক্ত ছিলেন, তখন তাকেও এনজিএন নিশানা করে। তিনি বলেন তাদের নজরদারি তাঁর নিজের এবং পরিবারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে।

ওয়াটসন, যিনি নিজেও ক্ষমা এবং মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, রিউপার্ট মারডককে হ্যারি, রাজা চার্লস এবং “অন্যান্য অগণিত” ভুক্তভোগীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

 

হ্যারি তিনটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তারা তাঁর ফোন মেসেজে আড়ি পেতেছে এবং প্রাইভেট গোয়েন্দা নিয়োগ করে বেআইনি ভাবে তাদের ‘স্কুপ’ খবর বের করতে সাহায্য করেছে।

 

ডেইলি মিরর পত্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর মামলায় হ্যারি জয়ী হন, যখন বিচারক রায় দেন যে ঐ পত্রিকায় ফোন হ্যাকিং “ব্যাপক এবং অভ্যাসগত” কাজ ছিল।

ডেইলি মিররের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে করা মামলার বিচার চলাকালে হ্যারি হন ১৯ শতকের পর রাজকীয় পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি আদালতে সাক্ষ্য দেন। রাজকীয় পরিবার সাধারণত তাদের সমস্যা জনসমক্ষে আনতে চায়না।

 

নিউজ গ্রুপের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ফলাফলের পর, ডেইলি মেইল পত্রিকার প্রকাশকের বিরুদ্ধে আনা তাঁর তৃতীয় মামলা কীভাবে চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই মামলার বিচারকার্য আগামী বছর শুরু হবার কথা।

 

Side banner

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর

Side banner
Link copied!